Samir Roy

সমীর রায় এর সংক্ষিপ্ত তথ্য:

জন্ম ও পরিবার :  

সমীর রায় ১৯৮৪ সালের ২রা আগস্ট বগুড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম ঝর্ণা রায় এবং বাবার নাম বলরাম রায়।তিনি তিন বোনের একমাত্র ছোট ভাই। তার বাবা ছিলেন সরকারি চাকুরীজীবি (ভূমি প্রশাসনের তহশিলদার)।তার শিশুকাল কাটে বগুড়া শহরের মালতীনগরে। সমীর রায় যখন ক্লাস ফোরে পড়েন তখন তার বাবা সরকারি চাকুরী হতে অবসর নিয়ে বগুড়া শহরের কাছাকাছি কাহালু থানার ভালতা গ্রামে স্থায়ীভাবে সববাস শুরু করেন।  ২০০০ সালে মুরইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস.এস.সি পাশ করেন। হাইস্কুল জীবনে তিনি ছিলেন স্কুল ফার্স্ট বয় এবং সে সময় থেকেই তিনি বাড়ীতে তার কাজ করার প্রিয় ঘর “জীবন ঘর’’ – এ বসে ম্যাজিক, ছবি আঁকা, পত্রিকায় কার্টুন আকাঁ, প্রভৃতি নিয়ে কাজ করেন।

পড়াশোনা: এম.বি. এ. (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ।

পেশা: বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও  বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (BMET)-এর অধীন একজন গেজেটেড কর্মকর্তা  ।

কার্যক্রম: ছোট থেকেই তিনি ম্যাজিক করেন, ছবি আকাঁন  হাইস্কুল জীবন থেকেই পত্রিকায় কাটৃুন  আকাঁন ও লেখালেখি করেন, ২০০২ সালে প্রথম বই “নতুন কিছু ম্যাজিক শিখি’’ এবং ২০০৬ সালে তার ২য় বই আড্ডা জমানোর ব্যতিক্রম জ্ঞান’’ , ২০১৬ সালে তার ৩য় ম্যাজিকের বই ”আডডা জমানোর ম্যাজিক ”বের হয় ।  ইউটিউবে বর্তমান ১ লক্ষ ৬০ হাজার সাবস্ক্রাইবার । বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ম্যাজিক একাডেমি ও শপ www.samirmagicshop,com এর চিন্তাকারি , ডিজাইনার ,লেখক,  ও প্রতিষ্ঠাতা। 

ম্যাজিক নিয়ে আমার একান্ত কথা...

 ম্যাজিকের প্রতি আমার ভালোবাসা খুব ছোট থেকে। ক্লাস টু থেকে আমি ম্যাজিক করি ও ভালোবাসি। ১৯৯১ সালের কথা, ক্লাস টু তে আমার এক বন্ধুর দুলাভাই পেশাদার যাদুকর ছিল,সেই যে শুরু। তখন ম্যাজিক শেখা এত সহজ ছিল না। যা হোক তখন থেকেই আমার দুটি শখ ম্যাজিক আর আর্ট। ক্লাশ সিক্সে ও ক্লাশ টেন-এ স্কুলে ম্যাজিক শো করেছি। তবে এখানে একটা কথা বলি স্কুল জীবনে আমি বরাবর ভাল ছাত্র ছিলাম। প্রাইমারী স্কুল ছাড়ার সময় আমি ফার্স্ট ছিলাম আর হাই স্কুল ছাড়ার সময় আমি যে নাম্বার পেয়ে পাশ করি তা ছিল আমাদের ব্যাচের মধ্যে বেশি এবং স্কুল প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ। উল্লেখ্য,২০০০ সালে-ই বাংলাদেশে নাম্বারে ফল প্রকাশর শেষ সাল। ২০০০ সালে এস. এস.সি. পরীক্ষা দিয়েই প্রথম ম্যাজিকের বই টা লিখি (এই ওয়েবসাইটে ফ্রি পিডিএফ করে দেওয়া আছে)। এই বই-এ আমি বলেছি পড়াশোনা হল ১ , আর ম্যাজিক-আর্ট সহ সকল ক্রিয়েটিভ কাজ হল ০ (শুন্য)। পড়াশোনা ১ এর সাথে ডানে যত ০ (শুন্য,ক্রিয়েটিভ কাজ) যোগ হবে ততই নিজের মান বাড়বে কিন্তু বামের ১ অর্থাৎ পড়াশোনা বাদ গেলে ০ (শুন্য) গুলোর দাম থাকেনা। তাই পড়াশোনা আগে। কতটুকু ভালবাসা থাকলে এস.এস.সি. দিয়েই ম্যাজিকের বই লেখা যায়….. তারপর আজ পর্যন্ত ম্যাজিকের সঙ্গ ছাড়িনি। এর মধ্যে আরো দুটি বই বের হয়েছে। ম্যাজিকে মানুষ অবাক হয়ে আনন্দ পায়,এই আনন্দ দেওয়ার জন্যই আমি ম্যাজিক করি। আপনাদের আর্শীবাদে বর্তমান আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একজন অফিসার। ম্যাজিক শেখাতে ভালোবাসি বলেই ২০০০ সাল থেকে বই এ ম্যাজিক শিখিয়ে দেই। আর ম্যাজিকে যেহেতু একস্ট্রা ইন্সট্রুমেন্ট বাধ্যতামূলক প্রয়োজন হয়, তা যেন সহজে কেউ পায়, সেজন্যই আমার এই ওয়েবসাইট (নিজের হাতে বানানো ) অন্যথায় আমি ম্যাজিক প্রোডাক্ট ইমপোর্ট করে অন লাইন শপ করতাম না। ম্যাজিক আমার ভালোবাসা, কোন ভাবেই ব্যবসা নয়। আপনাদের ভালোবাসাই আশা করি শুধু।

সমীর রায়ের ছোটবেলা ও ম্যাজিক :

আমি ক্লাশ টু থেকেই ম্যাজিক করি । একেবারে ছোট বেলায় আমার বাবার সরকারী চাকুরীর সুবাদে আমরা থাকতাম বগুড়া শহরের মালতীনগরে । সেখানে টুংকু নামের এক ছেলের মাধ্যমে আমার ম্যাজিক শেখা শুরু । টুংকুর দুলাভাই ম্যাজিশিয়ান ছিল । টুংকুর থেকেই আমার ম্যাজিক শেখা শুরু । তারপর থেকে চলতেই আছে,প্রথম থেকেই আমি যদি খোজঁ পেতাম কেই ম্যাজিক জানে ,তার কাছে যেতাম..শিখতাম , প্রাকটিস করতাম, সবাইকে দেখাতাম.. আমার বাবার সরকারী চাকুরী শেষ হলে আমরা স্থায়ী ভাবে বগুড়া জেলার চারমাথা বাসস্ট্যান্ডের কাছে মুরইল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন ভালতা তে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করি । মুরইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হই ।ম্যাজিকের প্রতি ভালোবাসা ছিল বলেই ক্লাশ সিক্স-এ স্কুলে প্রথম  ম্যাজিক শো শুরু করি,যা চলছেই…….ম্যাজিকের প্রতি কতটুকু ভালবাসা থকলে ২০০০ সালে এস. এস . সি পরীক্ষা দিয়ে ম্যাজিকের বই “নতুন কিছু ম্যাজিক শিখি ” বই টি লেখা যায় । উল্লেখ্য তখন ইন্টারনেট/ ইউটিউব ছিল না,তখন ম্যাজিক শেখা জটিল ছিল,বই প্রকাশ করাও জটিল ছিল । আর একটা কথা তখন,২০০০ সালে আমি যখন  ম্যাজিকের বই  লিখি তখন বাংলাদেশের  কোন লেখকের ম্যাজিকের বই বাজারে পাইনি,আমি বলছি না আমার এই বই টিই প্রথম ম্যাজিকের বই যা ঢাকার বাংলাবাজার এর কোন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে,শুধু বলছি তন্ন তন্ন করেও বাংলাদেশর অন্য  কারো  লেখা বই পাইনি। তবে এটুকু বলা যায় বাংলাদেশের সবচেয়ে কম বয়সী ম্যাজিকের বই লেখক ……

মুরইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে, হাই স্কুল জীবন ও ম্যাজিক নিয়ে আমাদের স্কুলের ম্যাগাজিনে একটা লেখা দিয়েছিলাম । সেই লেখাই এখানে দিচ্ছি । উল্লেখ্য, ম্যাগাজিন টার সম্পাদক আমি ছিলাম ও স্কুলের ইতিহাস টা আমি লিখেছিলাম ।

SIZE 5INCH 300 DPI OK

ম্যাগাজিনের লেখা

আমার জীবনের স্বর্ণযুগ

ভালতা গ্রামের সামনের বড়ীটাই আমাদের । বাবা সরকারি চাকরি (ভূমি প্রশামনের তহসিলদার) করতেন । ১৯৯৫ সালে ,গেইট থেকেই স্কুল, স্কুলের এসেন্বেলি দেখা যেত। ভালতা প্রাইমারী স্কুলে পড়তেই ভাবতাম কবে যাব এই স্কুলে! ৫ম শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা বোনের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম, এসে শুনি আমি মুরইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গেছি। কীভাবে? ভালতা প্রাইমারী স্কুলে আমার রোল ১ ছিল, সেই সুবাদে গ্রামের দিলদার স্যার আমাকে চিনতো এবং আমাকে না জানিয়েই স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন, সেই যে শুরু আজও এটাই আমার জীবনের স্বর্ণযুগ। সেই ১৯৯৫, সিক্স থেকে ২০০০ ঝ.ঝ.ঈ পর্যন্ত যে কত স্মৃতি চোখে জ¦ল জ¦ল করছে ……….। কয়টা বলি, আর কয়টা রাখি,আর কীভাবে লিখি ?……….রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত বলতে হচ্ছে….
“সহজ কথায় লিখতে আমায় কহ যে
সহজ কথা যায়না লেখা সহজে…..”

samir lekha 1 5 inch 300dpi

 

প্রথমেই ক্লাস সিক্সের একটা ঘটনা বলি। আমি প্রাইমারি থেকেই ম্যাজিক করি। প্রথমেই সবাই জেনে গেছে আমি ম্যাজিক পারি। আমার অন্যতম প্রিয় ফজলু স্যার একদিন সব ক্লাশ একত্র করে (বড় সব ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীরা আছে) মিনি ম্যাজিক শো করালেন। দেখালাম কিছু ম্যাজিক। আমার ম্যাজিক শো-এর সহকারী ছিল আমার গ্রামের (ভালতার) বন্ধু রাজা। ছোট মানুষ হিসাবে বেশ কিছু ম্যাজিক দেখিয়ে ছিলাম। বোতলের ভিতর দড়ি দিয়ে উল্টো করলেও দড়ি পড়ে না, এই ম্যাজিকে আমি যে কৌশলে বোতলের ভিতর ছোট আলু ঢুকে দেই, রাজা তো পরে সবাইকে বলে বেড়ালো। কাগজ খেয়ে জোড়া
ম্যাজিকে, আমি কীভাবে পেচানো কাগজের মাউথ কয়েল মুখে ঢুকে দিয়েছিলাম – সহ আরো কিছু ম্যাজিকের কৌশল রাজা বলে দিল, আটকানো গেল না।
পুরো স্কুল জীবনে ক্লাসে আমি হাসি তৈরির মেশিন ছিলাম। ক্লাসের বেশির ভাগ সময় আমার কাজ ছিল, ক্যামনে হাসাহাসি করা যায়। যেমন দাদা স্যার সাধারণত ক্লাসে রিডিং পড়াতো। একজন যেখানে শেষ, পরের জন সেখানে শুরু। তো আমার ভাগে আসলে, আমি পড়তে পড়তে, স্যার একটু অন্যমনস্ক হলেই উল্টো-পাল্টা পড়তাম। কখনও হঠাৎ শেষ লাইন পড়তাম বা আমার নিজস্ব কিছু রসাত্মক কথা বলাতাম (পড়ার মত সুর করে)। ছাত্র-ছাত্রীরা হাসার জন্য মার খেত। কেউ যদি আমার কথা বলেও দেয় সমস্যা নেই, দাদা স্যার মারার সময় কত ডিগ্রি এংগেলে বডি বাকালে সবগুলো মার বেঞ্চে লাগবে, আগেই আবিষ্কার করেছিলাম। আর একটা ছোট ঘটনা বলি। ফজলু স্যারের তখন মারামারির রেকর্ড-এর জন্য অনেক সুনাম। আমরা সবাই জানি স্যারের মারের পছন্দের জায়গা হল শরীরের পশ্চাৎ দিকে (হ্যাঁ,যেটা মনে করেছেন, সেটাই)। তো একদিন পড়া হয়নি, ভালো কথা, জানি আমার সিরিয়ালে কী অপেক্ষা করছে। আমি প্যান্টের পিছনে একটা খাতা ঢুকালাম। বন্ধু কাইয়ুম কেউ বুদ্ধিটা দিলাম। কারণ বিশেষ বুদ্ধি ধরা পড়লে একজন বিশেষ মার খাওয়ার সঙ্গি থাকবে। যথা সময়ে অনেক শব্দ হল কিন্তু লাগলো না ………..। বুদ্ধিই আমার সম্বল (তা ভালো-মন্দ যে বুদ্ধি-ই হোক)। সে জন্য হাই স্কুল জীবনে আমার বাড়ীর দরজায় লেখা ছিল “সমীরের বুদ্ধি, ঘন্টায় বৃদ্ধি”; লাইনটা সবাই জানত। একদিন এই স্কুলের জমি দাতা সদস্য বিঞ্চপুরের ঠান্ডু মাস্টার বলেছিল, তুমি যে দরজায় লিখে রেখেছো সমীরের বুদ্ধি, ঘন্টায় বৃদ্ধি ……….. তো তোমার লজ্জ¦া শরম কিছু নাই, নিজের বুদ্ধির কথা নিজেই লিখে রেখেছো? কিন্তু আমার লজ্জা নেই, কারণ ভাবতাম বুদ্ধি-ই আমার সম্বল তবে তা ভালো থেকে মাঝে মধ্যে মাঝারী মানের দুই নাম্বারি বুদ্ধিও হয়ে যেত। যেমন- জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহতে প্রতি বছর কাহালু থানার সবগুলো স্কুলের ভিতর উপস্থিত বক্তৃতায় ফাস্ট হওয়া। কথা ভালোই বলতাম তবে ফাস্ট হওয়ার আর একটা বুদ্ধি ছিল। লটারী করে উপস্থিত বক্তৃতার যে টপিক-ই উঠুক সমস্যা নেই। দুই জনের বাণী অবশ্যই থাকতো (১) টমাস ফুলার, (২) উইনস্টোন চার্চিল। লটারীর নির্ধারিত টপিক রিলেটেড একটা নিজের বানানো ভালো কথা ইনাদের মহা বাণী বলে চালিয়ে দিতাম।
যেমন ধরাযাক আমার বক্তৃতার টপিক উঠলো “নারী শিক্ষা”। বক্তৃতার মধ্যে এক সময় বললাম “টমাস ফুলার বলেছেন,যে জাতি নারীকে পিছিয়ে রেখেছে সে জাতি অর্ধেক উন্নয়ন কে পিছিয়ে রেখেছে” (টমাস ফুলার এমন কথা হয়তো স্বপ্নেও চিন্তা করেনি)। বিচারক মন্ডলী ভাবতো, টমাস ফুলার যে কোন বই-এ এই বাণী দিয়েছে……..!! আমি যে বানিয়ে বাণী বলতে পারি, এতটুকু বাচ্চার যে এই বুদ্ধি হয়ে গেছে, বিচারক মন্ডলী কল্পনাতে ভাবেনি ……. ফলাফল প্রতি বছর বক্তৃতায় “সমীর ফার্স্ট”। স্কুলে একটা ইলেকট্রনিক মিউজিক্যাল সার্কিট তৈরি করার জন্য বি. এসসি. স্যার, মানে নূরুল স্যার (বর্তমানে হেড স্যার) আমাকে “ক্ষুদে বিজ্ঞানী” নাম দিয়েছিলেন। আমার এক ক্লাস বড় ভাই বন্ধু আব্দুস সালাম বাবু (বর্তমান একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক ও টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার) আমার এতবড় উপাধীতে হিংসে হয়ে খুদ বিরানী (ভাঙ্গা চালের বিরিয়ানি) বলত।

আমি একেবারেই স্কুল মিস করতাম না। ১০০% উপস্থিত। তো একবার আমার ৪র্থ পিরিয়ডের পর ছুটি লাগবে। তো দরখাস্ত লিখেছিলাম, স্বাভাবিক দরখাস্তের ফরম্যাটের শেষের দিকে লেখা ছিল “আমার মাত্র শেষ ৪ পিরিয়ড ছুটি দরকার, পুরো দিন নয়। আর যেহেতু আমি একদিনও স্কুলে অনুপস্থিত থাকিনা, তাই আমার ছুটি পাওয়ার অধিকার আছে।” ………… এই “অধিকার” শব্দের জন্য তৎকালীন হেড স্যার আহম্মদ স্যার, রসায়ন স্যার সহ সাবই অনেক হাসাহাসি করেছিলেন।

স্কুল জীবনের সেভেন থেকেই পত্রিকায় স্কুলের নাম সহ লেখালেখি ও কার্টুন আকাঁনোর কথা না বললেই নয়। আমাদের বাসায় পত্রিকা নেওয়া হতো না,আমি প্রতিদিন স্কুল ছুটির পর বাসস্ট্যান্ডে এসে হোটেলে ১ টাকা দিয়ে দিয়ে দুধ চা খেয়ে রাজ্জাক ভাইয়ের দোকানে দৈনিক আজ ও আগামীকাল পত্রিকা এবং অত্র স্কুলের দাতা সদস্য ইয়াকুব কাকার দোকানে দৈনিক করতোয়া পত্রিকা পড়তাম। অনেক কার্টুন পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। তখন বগুড়ার স্থানীয় পত্রিকা “করতোয়া”, “আজ ও আগামীকাল”, ঢাকার জাতীয় পত্রিকা “সংবাদে” ও মাসিক পত্রিকা “ছোটদের কাগজে” কার্টুন আকাঁতাম। শুধু হাই স্কুলের কার্টুনের পেপার কাটিং নিয়ে একটি খাতা আজো আছে, তার দু-একটি পেপার কাটিং দিলাম।

 

 

 

আমি বিশ্বাস করি , Art for art’s sake শিল্পের জন্যই শিল্প,ব্যবসার জন্য নয়…. যেদিন যেদিন দৈনিক করতোয়া পত্রিকায় কার্টুন প্রকাশ পেত সেদিন যখন বাসস্ট্যান্ড দিয়ে হেটে যেতাম, এলাকার মানুষ, স্কুল রিলেটেড গুরুজন খুব প্রশংসা করত, ব্যাপারটা আমার জন্য অনেক ভালোলাগার ছিল।
ক্লাস এইটে উত্তর বঙ্গের ভিতর দৈনিক আজ ও আগামীকাল পত্রিকার একটা রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলাম। স্কুলের স্যারেরা এত খুশি হয়েছিলেন যে সব ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের একত্র করে আমাকে একটা ছোট সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। সেদিন আমার সেই মিনি সংবর্ধনার পর দুপুর ১২টায় স্কুল ছুটি হয়ে যায়। এটা যে আমার জীবনের কত বড় স্মৃতি, বলে বোঝাতে পারবনা।
প্রত্রিকায় কার্টুন ও লেখা নিয়ে অনেক ঘটনা বিদ্যমান তবে আর একটা বলে স্কুলে পত্রিকার কথা শেষ করব। আমাদের সময় স্কুলে শুধু নবম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা বার্ষিক পিকনিকে যেত। জানি এখনও (২০২৩) সেই নিয়ম চালু আছে। তো আমাদের পালা আসলে (১৯৯৮ সাল) আমরা নাটোর দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী যাই। এটা নিয়ে পত্রিকায় লেখা দিয়েছিলাম। যার মধ্য একটা লাইন ছিল “দিলদার স্যার রাজবাড়ীটা ভালোভাবে দেখতে দেয়নি”। যেদিন পত্রিকায় লেখা প্রকাশ পায়, তার পর দিন ক্লাসে দিলদার স্যার এসে বলেন “তুমি তো পত্রিকায় লেখা দিয়েই খালাস, আমি তো কমিটির/বাসস্ট্যান্ডের মানুষের জবাব দিতে দিতে বাসস্ট্যান্ড-ই পার হতে পারিনা।”
স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা নিয়ে দু’এক লাইন বলতেই হবে। তা হল প্রতিবছর আমরা নাটক করতাম। আমি যেহেতু সহজাত হাসাহাসির মানুষ তাই নাটকে হাসানোর চরিত্র (যেমন- সাধারণত চ্যামচ্যা প্রকৃতির)-ই থাকতো। একবার “যুগে যুগে চ্যামচ্যা” নাটকের প্রধান চরিত্র “চ্যামচ্যা তারু মোড়ল” ছিল আমার চরিত্র। আমি নাটকের ডায়ালগের মাঝে আমাদের মৌলবি স্যারের ডায়ালগ “কী ভ্যাজাল” বলে বলে স্কুলে ডায়ালগটা জনপ্রিয় করেছিলাম, উল্লেখ্য নাটকের ফার্স্ট প্রাইজ টা আমিই পাই। স্পোর্টস শেষ হওয়ার পরও স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে মুখে কারণে অকারণে “কী ভ্যাজাল” ডায়ালগটা চলছিল। বার্ষিক ক্রীড়া নিয়ে অনেক কথা ছিল তবে একটা কথা বলি। তা হল প্রতিযোগিতায় যারা ১ম, ২য়, ৩য় হতো তাদের শুধু প্রাইজ দেওয়া হতো কোন সনদ দেওয়া হতনা, আমি প্রথম হেডস্যার ও ফজলু স্যারকে বলে ২০০০ সালে একটি বøাংক সনদ আর্ট করে দেই,যেটি ফটোকপি করে নাম লিখে প্রইজের সাথে সনদ হিসাবে দেওয়া হয় । আমার আর্ট করা সনদ টা নি¤œরুপ:

 ১০ম শ্রেণীতে আমার বড় ও সফল ম্যাজিক শো’র কথা বলতেই হবে একটু। ফজলু স্যার আমার এসব কার্যক্রমে আমাকে খুব ভালবাসেন। ফজলু স্যার আমি টেন এ পড়া অবস্থায় আবার একটা ম্যাজিক শো’র আয়োজন করেন। এবার ক্লাশ সিক্সের মতো ছোটখাট না। প্রায় দের ঘন্টা ব্যাপি আমার সফল ম্যাজিক শো হয়। বেশির ভাগ ম্যাজিক ছিল আমার হাতে বানানো। অনেক ম্যাজিক ছিল,তবে একটা বলি.. এক গøাসে তুষ ভ্যানিশ হয়ে কিছু খাবার হবে…যেটা খেতে চাইবে সবাই সেটাই বানাবো । তবে তা চানাচুর ও সার্কাস দেখানোর জন্য তিনটি আলু বের হওয়া

ছাড়া কোন বিকল্প নেই,কারণ আমি এগুলোই লুকিয়ে রেখেছি। ম্যাজিক্যাল ফলস্ লটারী করে চানাচুর উঠলো । এখন আলু কী করা যায়,চানাচুরের সাথে আলু তো বের হবেই। হটাৎ কাইয়ুম বললো আমি আলু খাবো…সহজেই বোঝা যাচ্ছে এটি কাইয়ুম কে আগেই শিখিয়ে দেওয়া..কিন্তু আমাকে অপ্রস্তুত করার অপরাধে কাইয়ুম কে ফজলু স্যার সবার মধ্য সেই বকা দিল। ম্যাজিক শো’র দিন আমার আঁকা নজরুল ইসলামের একটি বড় ছবি স্কুলে দিয়েছিলাম, যা আজও স্কুলের দেয়ালে আছে। উল্লেখ্য আমার সময়ে আঁকা, স্কুলের দেয়ালে এখনও যা যা আছে তা হল প্রথম দেয়ালে পত্রিকা শুভযাত্রা (আমার আঁকা), মুক্তিযুদ্ধ ম্যাপ (মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে বাংলাদেশের ম্যাপ), স্কুলের ম্যাপ প্রভৃতি।
এবার স্কুলের আসল বিষয় পড়াশোনা ও S.S.C এর রেজাল্ট নিয়ে একটু বলি। ক্লাশ নাইনের প্রথম দিকে সেবার আমাদের সরকার থেকে টেক্সট বই চেঞ্জ হয়েছিল। বই পেতেও দেরি হয়। তার উপর ছবি আঁকা, ম্যাজিক, পত্রিকায় কার্টুন/লেখা নিয়ে এত মত্ত যে নাইনের প্রথম সাময়িক পরীক্ষা খারাপ হয়। মনে আছে নবম শ্রেণীর ১ম সাময়িক পরীক্ষা দেওয়ার পর,পরীক্ষা খারাপ হচ্ছে বলে হেটে হেটে বাড়ী যাওযার সময় চোখ দিয়ে শুধু জলই পড়েছে। বাড়ীতে গিয়েই আর্টের সব জিনিস, কবিতার খাতা, অর্ধেক লেখা উপন্যাস “তন্দ্রা” (সেটা আজও অসমাপ্ত), ম্যাজিক উপকরন, ডায়েরি, প্রভৃতি সব প্যাকেট করে আমার জীবন ঘরের (বাড়ীতে আমার কাজের ঘরের নাম) কোটার উপরে (ঘরের তালার উপর) রাখলাম। টিভির এন্টেনা আর বাঁশ (তখন একমাত্র টিভি চ্যানেল ইঞঠ দেখার) ভেঙ্গে ফেললাম যেন ইচ্ছা করলেও টিভি দেখতে না পারি…….। পড়া শুরু করলাম। ফল পেলাম, ২০০০ সালে স্কুলের টেস্ট পরীক্ষায় প্রথম হলাম এবং এস এস সি পরীক্ষায় আমাদের ব্যাচের মধ্যে সব সবচেয়ে বেশি ৭৩৮ নাম্বার পেলাম র্(অংকে ৯৪)। ঝ.ঝ.ঈ-তে ৭৩৮ নাম্বার যা আমাদের ব্যাচে তো বটে-ই ইতিপূর্ব সব ব্যাচের মধ্যেই স্কুলে সবচেয়ে বেশি। ২০০০ সালের পর S.S.C. -তে গ্রেডিং পদ্ধতিতে রেজাল্ট দেওয়া শুরু হয়, নাম্বারে রেজাল্ট বন্ধ হয়,তাই আমার সামান্য ৭৩৮ নাম্বার-ই স্কুলের সর্বোচ্চ নাম্বারের ব্যতিক্রম রেকর্ড হয়ে স্থির হয়ে আছে।
এরকম হাজার ঘটনা আছে। আরো বললে তো লেখা অনেক বড় হবে (ইতিমধ্যে লেখা বড় হয়েই গেছে)। তবে ১৯৯৮ সালে প্রথম ম্যাগাজিন বের করার উদ্যোগ ও ব্যর্থতার ইতিহাসটা না বললেই না, সেটা বলেই আমি আমার লেখা শেষ করব।
১৯৯৮ সালে আমি যখন নবম শ্রেণীতে পড়ি তখন স্কুলে প্রথম ম্যাগাজিন বের করার উদ্যোগ নেই। স্যারদের বলি, স্যাররাও সম্মত হয়। সকল ছাত্র-ছাত্রীদের একত্র করে মিটিং করা হয়। সেদিন ক্লাসের বন্ধু রুবেল আমার নাম প্রস্তাব করে। সর্বসম্মতিক্রমে আমি ম্যাগাজিনের সম্পাদক নির্বাচিত হই। প্লান হয় সকল ছাত্র-ছাত্রী ১০ টাকা করে তুলবে। কথা মত সকল ক্লাশে টাকা উঠতে থাকল। কিন্তু শেষে এসে একদিন হক ভাই আমাকে বলল, হেড স্যার আহম্মেদ স্যার আমাকে ডাকছে। আহম্মেদ স্যার আমাকে বললেন, “কমিটি নিয়ে সমস্যা আছে, এখন ম্যাগাজিন বের করা যাবে না।” মনটা ভেঙ্গে গেল। আমি সম্পাদক হিসাবে প্রতি ক্লাশে বিষয় টা জানিয়ে দিলাম এবং সবার টাকা ফেরত দিতে বললাম। সাথে এও বললাম যদি পারো টাকাগুলো ফেরত না দিয়ে পিকনিক করে খাও। প্রতি ক্লাশে একেক দিন পিকনিক হতে লাগল। কিন্তু আমাদের নাইন ক্লাশের পিকনিক হলো হঠাৎ। কারণ আমরা যে ডেট করেছিলাম তত দিনে স্কুল একটা বড় ছুটিতে পড়ে। তাই ছুটির আগের দিন হেডস্যার বেলা ১১টায় বলেন “ তোমরা যদি পিকনিক করো তো আজই করতে হবে”। আমি তখনই কাইয়ুম, সাহাব উদ্দিন, রুবেল, শামিম দের নিয়ে পিকনিকের বাজার শুরু করলাম। মাংসের প্লান ছিল খাসির, কিন্তু হঠাৎ করে পিকনিক হওয়াতে বাস স্ট্যন্ডে গরুর মাংস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আমিই সব আয়োজন করলাম। কিন্তু সাবই ভাবছে যেহেতু আমি হিন্দু,তাই হয়তো শেষে আমি না খেয়ে চলে যাব। আমি যেন শেষে না চলে যাই সেজন্য আমার ক্লাশের সবাই দিলদার স্যারকে দিয়ে আমাকে ডাকালো,দিলদার স্যার বললেন “তুমি পিকনিকে না থাকলে ঝ.ঝ.ঈ-তে পাশ করবা না।” কাইয়ুম কোথায় থেকে যে একটা মুরগী ধরলো….আর আমাদের ক্লাশের বান্ধবী মাসুমা আর উদয় (জনি) আলাদা করে মুরগীর মাংস রান্না করল,শুধু আমার জন্য। এটিই স্কুলে আমার জীবনের সেরা স্মৃতি ,সেরা সুখ ও দুঃখের স্মৃতি। দুঃখ হল ম্যাগাজিন বের না হওয়া আর সুখ হল ক্লাশের বন্ধুদের এমন ভালোবাসা পাওয়া। যে ম্যাগাজিনের টাকা দিয়ে পিকনিক হলো সেই ম্যাগাজিন ঠিকই বের হলো, সম্পাদক আমি-ই থাকলাম কিন্তু ২৫ বছর পর ২০২৩ সালে। এই ম্যাগাজিনের জন্য স্কুলে অনেকবার গিয়েছি। হেড স্যারের পাশের রুমে যেখানে ম্যাজিক শো করেছিলাম,সেই রুম টা দেখে,যে রুমে আমার জন্য মুরগির মাংস রান্না হয়েছিল সেই রুম টা দেখে কতবার যে স্মৃতিকাতর হয়েছি….. কতবার যে চোখের কোণায় জল এসেছে তা আমিই জানি…….আমি আমার স্কুল ও স্কুলের স্যারদের অনেক ভালোবাসি,হয়তো স্কুল কে কিছুই দিতে পারিনি তবে ২০১৬ সালে প্রকাশিত আমার লেখা ৩য় বই “ আড্ডা জমানোর ম্যাজিক ” বই টি আমি স্কুল ও স্কুলের শিক্ষকদের উৎসর্গ করেছিলাম…আমি যে কোন দিব্যি দিয়ে বলতে পারি আমার ভালোলাগার আমার জীবনের স্বর্ণযুগ মুরইল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের দিনগুলো ……

সমীরের ছাত্রাবস্তায় করা কিছু শিল্পকাজ:

Select the fields to be shown. Others will be hidden. Drag and drop to rearrange the order.
  • Image
  • SKU
  • Rating
  • Price
  • Stock
  • Availability
  • Add to cart
  • Description
  • Content
  • Weight
  • Dimensions
  • Additional information
Click outside to hide the comparison bar
Compare
Main Menu Category Menu
What are you looking for in Partdo?
×